কে এই মি’য়ানমারের মু’সলিমবি’রোধী ‘বৌদ্ধ বিন লাদেন’?
মসজিদকে তিনি বর্ণনা করেন “শ’ত্রুর ঘাঁটি” হিসেবে, তার কাছে মু’সলিমরা হচ্ছে “পাগ/লা কুকুর”,
মু’সলিমদের বি/রুদ্ধে তার অভিযোগ “তারা চু’রি করে ও বর্মী মহিলাদের ধ.র্ষণ করে” এবং “গণহারে জন্ম দিয়ে তারা খুব দ্রুত নিজেদের বিস্তার ঘটাচ্ছে।”
তার নাম আশিন উইরাথু। বিশ্বের সবচেয়ে বি’তর্কি’ত বৌদ্ধ ভিক্ষু তিনি। মি’য়ানমারে কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে তাকে রক্ষা করার পাশাপাশি তাকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে।
আর একারণেই তিনি মু’সলিমদের বি’ষয়ে দিনের পর দিন এরকম বিদ্রূপাত্মক ও নি’ন্দাজনক বক্তব্য দিতে সক্ষম হচ্ছেন।
কিন্তু সম্প্রতি তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার-জয়ী ও মি’য়ানমারের ডিফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিকে আ’ক্রমণ করার পর দেশটির কর্তৃপক্ষ এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে তিনি তার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন এবং এখন তার বি’রুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মা’মলায় গ্রে’ফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
কিন্তু বি’তর্কি’ত এই বৌদ্ধ ভিক্ষু আসলে কে?
যেভাবে শুরু
আশিন উইরাথু প্রথম আলোচনায় আসেন ২০০১ সালে যখন তিনি মু’সলিমদের মালিকানাধীন ব্যবসা ও দোকানপাট বয়কট করার জন্যে প্রচারণা শুরু করেন।
এরকম একটি প্রচারণা শুরু করার পর ২০০৩ সালে তাকে গ্রে’ফতার করা হয়। বিচারে তার ২৫ বছরের সাজা হয়েছিল। কিন্তু তাকে পুরো সাজা খাটতে হয়নি। সাত বছর পর স’রকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমায় তিনি ২০১০ সালে কা’রাগার থেকে বের হয়ে আসেন।
কিন্তু উইরাথুর জে’ল-জীবন তার মধ্যে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি, বরং মি’য়ানমারের সংখ্যালঘু মু’সলিমদের বি’রুদ্ধে তিনি তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য অব্যাহত রাখেন।
আশিন উইরাথু তার বক্তব্য বিবৃতিতে বৌদ্ধদের শৌর্য বীর্যের কাহিনী তুলে ধরেন, তার সাথে মিশিয়ে দেন জাতীয়তাবাদের নে’শাও।
সাংবাদিকদের সাথে যখন উইরাথু কথা বলেন তখন তিনি খুব শান্তভাবে তাদের প্রশ্নের জবাব দেন ঠিকই, কিন্তু তিনি যখন সভা সমাবেশে বা জনসভায় বক্তব্য রাখেন তখন তিনি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ হয়ে উঠেন।
তার কথার প্রতিটি বাক্যে ছড়িয়ে থাকে মু’সলমানদের প্রতি ঘৃণা। মি’য়ানমারের বিদ্যমান মু’সলিম-বিদ্বেষে তার এসব বক্তব্য আরো উ’স্কানি জোগাতে সাহায্য করে।
মু’সলিম পুরুষরা যাতে বৌদ্ধ নারীদের বিয়ে করতে না পারে সেজন্যে একটি আইন তৈরিতেও অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন উইরাথু। ওই আইনে মু’সলিম পুরুষের সাথে বৌদ্ধ নারীর বিয়ে অ’বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
“কোন সাপ ছোট হলেও সেটাকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। মু’সলিমরা ওই সাপের মতো,” বলেন তিনি।
ফেসবুকে নি’ষিদ্ধ
মু’সলমানদের বি’রুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে এক পর্যায়ে আশিন উইরাথু সোশাল মিডিয়াও ব্যবহার করতে শুরু করেন। তিনি বলতে থাকেন যে মি’য়ানমারে মু’সলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকার কারণে বৌদ্ধ সংস্কৃতি হু’মকির মুখে পড়েছে।
এরই এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাকে নি’ষিদ্ধ করে। ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয় যে সংখ্যালঘু মু’সলিম রো’হিঙ্গাদের লক্ষ্য করেই তার এসব বিদ্বেষমূলক পোস্ট।
উইরাথু তখন বিকল্প হিসেবে অন্যান্য সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের কথা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “ফেসবুক যখন আমার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়, আমি তখন ইউটিউবের উপর নির্ভর করি। আবার ইউটিউব যেহেতু খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না, সেহেতু আমার জাতীয়তাবা’দী কাজ অব্যাহত রাখার জন্যে আমি টুইটার ব্যবহার করবো।”
রুশ সোশাল মিডিয়া এবং নেটওয়ার্কিং সাইট ভিকের মাধ্যমেও তিনি তার অনেক ভিডিও শেয়ার করে থাকেন।
কিন্তু শুধু যে ফেসবুকই তাকে নি’ষিদ্ধ করেছে তা নয়, এবছরের এপ্রিলে প্রতিবেশী ও বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশ থাইল্যান্ডে তার ধর্মীয় বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু থাই কর্তৃপক্ষ তাতে বাধ সেধেছে।
ভু’ল বোঝাবুঝি উল্কার মতো তার এই জনপ্রিয়তা বৃ’দ্ধির কারণে ভুগতে হয়েছে সংখ্যালঘু রো’হিঙ্গা মু’সলিম জনগোষ্ঠীকে। তাদের সংখ্যা মি’য়ানমারের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনেও উইরাথুকে চিত্রিত করা হয় একজন স’ন্ত্রাসী হিসেবে।
২০১৩ সালের জুলাই মাসে ম্যাগাজিনটির একটি সংখ্যার প্রচ্ছদে তার একটি ছবি ছাপিয়ে তাতে লেখা হয়: “এক বৌদ্ধ স’ন্ত্রাসীর মুখ।”
“ভু’ল বুঝে আমাকে আ’ক্রমণ করা হচ্ছে। আমার মনে হয় এক দল লোক আছে যারা আমার বদনাম করার জন্যে মিডিয়াকে অর্থ দিচ্ছে। আর এটা তো নিশ্চিত যে মু’সলিমরাই অনলাইন মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে,” বিবিসিকে ২০১৩ সালে একথা বলেন তিনি।
আশিন উইরাথুর উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয় ২০১৫ সালে। ওই ডকুমেন্টারিতে তাকে বর্ণনা করা হয় একজন “বৌদ্ধ বিন লাদেন” হিসেবে।
কিছু কিছু পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমও খুব দ্রুতই তার এই নামটি লুফে নেয়। তবে উইরাথু বলেন, এরকম তুলনা তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আশ্বিন উইরাথু বলেন যে তিনি সহিং’সতাকে ঘৃণা করেন। “আমি খুব খা’রাপভাবেও এর জবাব দিতে চাই না,” বলেন তিনি।
জাতিসংঘের সাথে বি’রোধ একান্ন বছর বয়সী উইরাথু বিতর্কের মধ্যেই বেঁচে আছেন এবং বেশিরভাগ বিতর্ক তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন।
মি’য়ানমারের সংখ্যালঘু মু’সলিমদের দুঃখ দুর্দশা অনুসন্ধান করে দেখতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লী-কে ২০১৫ সালে যখন সেদেশে পাঠানো হয়েছিল উইরাথু তখন তাকে একজন ‘দুশ্চরিত্রা’ ও ‘বেশ্যা’ হিসেবে গাল দিয়েছিলেন।
রাখাইনের গণহ’ত্যায় সা’মরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের ভূমিকা কী ছিল সেটা খতিয়ে দেখতে গতবছরেই আহবান জানানো হয়েছিলে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আ’দালত বা আইসিসির পক্ষ থেকে প্রাথমিক এক ত’দন্তের সূচনা হওয়ার পরই এই আহবান জানানো হয়েছিল।
মি’য়ানমার স’রকার জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু উইরাথু তখন পাল্টা আ’ক্রমণ চালাতে শুরু করেন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আইসিসি যেদিন এখানে আসবে, সেদিনই উইরাথু ব’ন্দুক হাতে তুলে নেবে।”
রো’হিঙ্গা স’ঙ্কট রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সালে মু’সলিমদের বি’রুদ্ধে সহিং’সতা শুরু হওয়ার জন্যে আশ্বিন উইরাথুর সমর্থকদের ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়।
এর পরই সাত লাখেরও বেশি রো’হিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বা’ধ্য হয়।
এবি’ষয়ে ২০১৭ সালে ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইরাথু বলেছিলেন, “অং সান সু চি বাঙালিদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তাকে বা’ধা দিয়েছি।”
বর্মী জাতীয়তাবা’দীরা রো’হিঙ্গা মু’সলিমদেরকে প্রায়শই বাঙালি বলে উল্লেখ করে থাকে। রো’হিঙ্গাদেরকে বহিরাগত বোঝাতেই তাদেরকে বাঙালি বলা হয়।
ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির বি’রুদ্ধে উইরাথু অভিযোগ আনেন যে ওই দলটি গো’পনে মু’সলিম এজেন্ডাকে সমর্থন দিচ্ছে।
বৌদ্ধ ধর্ম মি’য়ানমারে কোন রাষ্ট্রীয় ধর্ম নেই। তবে দেশটিতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচণ্ড প্রভাব রয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশই বৌদ্ধ।
দেশটিতে কর্তৃপক্ষ শতাব্দীর পর শতাব্দী কাল ধরে বৌদ্ধ আশ্রমকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এর অবসান ঘটে ঊনবিংশ শতকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে।
ইরাবতী ও অন্যান্য নদীর কারণে অত্যন্ত উর্বর এই দেশের ভূমি। বৌদ্ধ আশ্রমগুলোও প্রচুর কৃষিজমির মালিক। ফলে দেশটিতে গড়ে উঠেছে অগণিত সুদৃশ্য বৌদ্ধ মন্দির।
মি’য়ানমারের রয়েছে সা’মরিক শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস। দেশটির সৈন্য সংখ্যা চার লাখেরও বেশি।
কিন্তু বৌদ্ধ ভিক্ষুর সংখ্যা তার চাইতেও অনেক বেশি। ধারণা করা হয় তাদের সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ লাখ। সামাজিকভাবেও তাঁরা শক্তিশালী, কারণ তাদের রয়েছে সামাজিক প্রভাব, প্রতিপত্তি এবং মর্যাদা।
মা বা থা
মু’সলিমবি’রোধী ও জাতীয়তাবা’দী একটি দল গঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন আশিন উইরাথু। গ্রুপটির নাম ছিল ৯৬৯।
এই দলের সমর্থকরা বলছেন, নামের প্রথম ৯ হচ্ছে বুদ্ধের নয়টি বিশেষ গুণ, ৬ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের ছ’টি বিশেষ অনুশিক্ষা এবং শেষ ৯ হচ্ছে সংঘের নয়টি বিশেষ গুণ।
কিন্তু বাস্তবে এই ৯৬৯ গ্রুপটি মু’সলমানদের বি’রুদ্ধেই প্রচারণা চালাতে থাকে।
পরে দলটি রাষ্ট্রীয়ভাবেও সমর্থন পেতে শুরু করে এবং ২০১৩ সালে মি’য়ানমারের প্রে’সিডেন্ট থিন সেইন প্রকাশ্যে এই গ্রুপটির আন্দোলন এবং ওই আন্দোলনের
সবচেয়ে প্রখ্যাত নেতা উইরাথুকে সমর্থন দেন। উইরাথুকে তিনি উল্লেখ করেন “বুদ্ধের স’ন্তান” হিসেবে।
এর কিছুদিন পরেই উইরাথু মা বা থা নামের আরো একটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হন।
দলটির এই নামের অর্থ বার্মার দেশপ্রেমিক সমিতি। এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে। তারপর হু হু করে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। এক সময়
সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে সংগঠনটি এবং এক পর্যায়ে ২০১৭ সালে এটিকে নি’ষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু মান্দালায় মা সোয়ে ইয়েন আশ্রম থেকে উইরাথু কোন ধরনের বা’ধা ছাড়াই প্রচারণা অব্যাহত রাখেন।
তার অফিসে তিনি এমন কিছু ছবি স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে থাকেন যেগুলোতে, তার ভাষায়, মু’সলিমদের সহিং’সতার কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
গেরুয়া পোশাক পরিহিত উইরাথু বিবিসিকে ২০১৩ সালে যে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাতে তিনি কখনো মু’সলিমদের বি’রুদ্ধে সহিং’সতার ব্যাপারে অনুশোচনা প্রকাশ করেন নি।
বরং তিনি বলেন, “মু’সলিমরা যখন দুর্বল থাকে শুধু তখনই তারা ভালো আচরণ করে। কিন্তু যখন তারা শক্তিশালী হয়ে উঠে তখন তারা নেকড়ে কিম্বা শৃগাল হয়ে যায়, তার পর তারা দল বেঁ’ধে অন্যান্য প্রা’ণীদের উপর আ’ক্রমণ করে।”
“মু’সলিমরা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে না। তারা খ্রিস্টান ও হিন্দুদেরকেও আ’ক্রমণ করে। আসলে তারা সবাইকে আ’ক্রমণ করে।
আপনি যদি এটা বিশ্বাস না করেন তাহলে আপনার পরমাণু প্রযুক্তি তালেবানকে দিয়ে দেখু’ন কী হয়, আপনার দেশ খুব শ্রীঘ্রই হারিয়ে যাবে,” বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি।
ব্যাপক প্রভাব
উইরাথু প্রায়শই বিদেশে ভ্রমণ করেন এবং শ্রীলঙ্কায় বদু বালা সে’না বা বিএসএস নামের একটি গ্রুপের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
মু’সলিমদের বি’রুদ্ধে স’হিংস প্রচারণা চালিয়ে এই গ্রুপটিও কু’খ্যাতি অর্জন করেছে।
“আজ বৌদ্ধ ধর্ম বি’পদে পড়েছে। আমরা যদি এই বি’পদ সঙ্কেত শুনতে পাই তাহলে আমাদের সবাইকে একসাথে হাত ধরতে হবে,” ২০১৪ সালে কলম্বোর এক সমাবেশে বলেছিলেন উইরাথু।
কিন্তু তার এই ব্যাপক জনপ্রিয়তা মি’য়ানমারের আশ্রমগুলোতে তখন আর ভালোভাবে গৃহীত হয়নি। স’রকার সমর্থিত সংঘ কাউন্সিল ২০১৭ সালে তার ধর্মীয় বক্তব্য রাখার উপর নি’ষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
কিন্তু তিনি আসল বি’পদে পড়তে শুরু করেন যখন তিনি মি’য়ানমারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিকে আ’ক্রমণ করেন, তার পর থেকেই।
সু চি-কে আ’ক্রমণ
“তিনি ফ্যাশনেবল কাপড় পরেন, মেকাপ দেন, হাই হিল জুতা পরেন এবং বিদেশিদের দিকে নিজের নিতম্ব নাড়িয়ে হেঁটে যান,” মি’য়ানমারের ডিফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির দিকে ইঙ্গিত করে উইরাথু একথা বলেন এপ্রিল মাসের এক সমাবেশে।
এছাড়াও মে মাসে দেওয়া এক ভাষণে স’রকারের এক সদস্যের বি’ষয়ে তিনি বলেন যে ওই ব্যক্তি “একজন বিদেশীর সাথে ঘুমাচ্ছেন।”
ব্রিটিশ একজন শিক্ষাবিদ মাইকেল এরিসের সাথে অং সান সু চি-র বিয়ে হয়েছিল। মিস সু চি যখন সা’মরিক বাহিনীর হাতে গৃহব’ন্দী তখন তার স্বামী ১৯৯৯ সালে ক্যান্সারে মা’রা যান।
“উইরাথু খুবই জনপ্রিয় একজন ভিক্ষু। তার অনুসারীর সংখ্যাও প্রচুর। তিনি যখন মু’সলিমদের আ’ক্রমণ করেন তখন তার অনুসারীরা খুশি হয়। কিন্তু এই উইরাথুই যখন অং সান সু চি-কে আ’ক্রমণ করেন তখন তার জনপ্রিয়তাও ধাক্কা খায়,” বলেন মিয়াত থু, ইয়াঙ্গুন স্কুল অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স নামের একটি গবেষণা
প্রতিষ্ঠানের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা অং সান সু চি মি’য়ানমারে পরিচিত “দ্যা লেডি” হিসেবে। কার্যত তাকে দেশটির প্রধান বলেই মনে করা হয়।
তার আনুষ্ঠানিক পদের নাম স্টেট কাউন্সিলর। প্রে’সিডেন্ট উইন মিন্ট তার ঘনিষ্ঠ মিত্র।
মি’য়ানমারের সংবিধানের কারণে অং সান সু চি কখনো দেশটির প্রে’সিডেন্ট হতে পারবেন না কারণ তার স’ন্তানরা বিদেশি নাগরিক।
বেসা’মরিক স’রকার মিস সু চির প্রে’সিডেন্ট হওয়ার পথে এই বা’ধা সরিয়ে দিতে চায় কিন্তু ভিক্ষু আশিন উইরাথু সংবিধানের এই পরিবর্তনের বি’রোধী।
“লোকজনের কাছে অং সান সু চির জনপ্রিয়তা প্রচুর। এমনকি অনেক কট্টরপন্থী ভিক্ষু, যারা উইরাথুর সাথে আছেন, তারাও এখন তার এই সু চি-বি’রোধী অবস্থান মেনে নিতে পারবেন না,” বলেন মিয়াত থু।
“উইরাথু যদি শুধু সংবিধানের পরিবর্তনের বি’রুদ্ধে কথা বলতেন তাহলে স’রকারের পক্ষে তার বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হতো। কিন্তু তিনি তো অং সান সু চিকে ব্যক্তিগতভাবে আ’ক্রমণ করেছেন যা মানুষ ভালভাবে নেয় নি।”
তিনি বলেন, “এখন তার বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়ে গেছে।”
কিন্তু তারপরেও আশিন উইরাথু দমবার পাত্র নন। তিনি বলেন, “তারা যদি আমাকে গ্রে’ফতার করতে চায়, তারা সেটা করতে পারে।”
সূত্র-BBC